আমার এই গল্পের শুরু ২০০৬ সালে, যখন বাংলার পাততাড়ি গুটিয়ে শুরু করি আমার প্রবাস জীবন। তার আগে দিল্লী ছিল এক বহু দূরের শহর, দেশের রাজধানী, যার খবর পেতাম সংবাদপত্রে। বাৎসরিক ভ্রমণ শেষে এই শহর ঘুরে হাওড়ায় ফেরার ট্রেন ধরা হতো। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে পাল্টে গেলো সব। সেই দূরের শহরই ধরা দিলো আমার হাতের কাছে, আমার নতুন আবাস হয়ে। চাকরি সূত্রে থালা-বাটি-গ্লাস আর কয়েকটা জামা কাপড় নিয়ে হাজির হলাম রাজধানী শহরে। বেলুড় মঠের কাছে আমার বাড়ি হলেও চিন্তায় চেতনায় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ঘরের মানুষ, আর বিবেকানন্দ দূরের অতিথি। শুধু তো রবীন্দ্রনাথের গান শেখা নয়, ইস্কুলের নানান শ্রেণীতে রবীন্দ্রনাথের কতকিছু পড়তে হয়েছে। তাঁর কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ সবকিছুতেই আবিষ্কার করতাম এক দারুন আগ্রহ। খানিক বোঝা আর না বোঝার আড়ালে বিরাজ করতেন তিনি, বিরাট দাড়ি গোঁফের সম্ভার নিয়ে। কলেজে পড়তে তখনকার “নন্দন” পত্রিকায় চিঠি লিখেছিলাম কেন রবীন্দ্রনাথ আমার প্রথম প্রেমিক। এহেন ভাবরাজ্যের বাসিন্দা হয়ে যখন এসে পড়লাম এই গোবলয় বেষ্টিত শহরে, ভেবেছিলাম ছাড়তে হলো ভালোলাগার অনেক কিছু। কর্ম আর অর্থ উপার্জনের আবর্তে হারিয়ে যায় তো কত কিছু। সে নিয়ে অধিক ভেবে লাভ কি? দিল্লী আসার সময় কিছু বইয়ের সাথে এনেছিলাম ছেঁড়াখোঁড়া এক গীতবিতান। কখনো হয়তো কাজে লাগবে ভেবে। কি আশ্চর্য, সেই কখনো ঘটলো অতি শীঘ্রই।
|
২০১৫ সালের রবীন্দ্র জয়ন্তী, রবীন্দ্র ভবন, দিল্লী |
ময়ূর বিহারের এক আবাসনে স্থান মিলেছিল তখন। একাই থাকতাম, একাই দুটো ফুটিয়ে খেতাম। আপিস থেকে ফিরে রান্নাবান্না, খাওয়া, বাসন মাজা, ঘরঝাঁট আর মোছা, কাপড় কাচার পরে অলস দেহ যখন খুঁজতো এক আশ্রয়, গীতবিতান দেখা দিতো রাজপালঙ্ক হয়ে। যে আপিসে কাজ করতাম, সেখানে এক সহকর্মিনী ছিল বাঙালি। আমারই মতো কলকাতা থেকে এসেছিলো এখানে। কাজের ফাঁকে সে আর আমি তপ্ত দুপুরে খালি গলায় গাইতাম কৃষ্ণকলি। দুজনেই আনন্দের সাগরে ভেসে যেতাম সেই গানের সুরে, তালে, লয়ে। উষ্ণ বাতাস আর রুক্ষ মনের মাটিতে সে গান সবুজ চারা হয়ে দেখা দিতো। ২০০৬ সালের পুজোর আগেই পরিচয় হলো ময়ূর বিহারের এক বাঙালি ক্লাবের সদস্যদের সাথে। ক্লাবের নাম অন্তরঙ্গ। নামের মতোই সেখানকার কিছু সদস্য হয়ে উঠলো আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। ছিলেন আমার আবাসনের এক মাসিমা, যাঁর কাছে মাতৃস্নেহের লোভে মাঝেমাঝেই হাজিরা দিতাম। তাঁর কাছেই শুনলাম পুজো উপলক্ষে ওই ক্লাবে সেবার হবে নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা। তিনি শুনেছিলেন পরিচালিকা চৈতালি মজুমদার একজন গানের ছেলে খুঁজছেন। অতএব যোগাযোগ হলো তাঁর সাথে। প্রবাসে রবি ঠাকুর খুলে দিলেন এক মোলায়েম রাস্তা, খালি পায়েই যেখানে দৌড়ানো যায়। হৈহৈ করে শুরু হলো মহড়া। অন্য কোথাও জায়গা পাওয়া যাচ্ছিলো না দেখে আমার খালি ফ্ল্যাটেই মহড়ার ব্যবস্থা হলো। আপিস থেকে বাড়ি ফিরেই প্রস্তুত হয়ে নিতাম। চৈতালিদি টিফিন বাক্স ভরে বিকেলের খাবার নিয়ে আসতেন, পাচ্ছে আমাকে রান্নার দিকে সময় না দিতে হয়। তার কাছে বসে একে একে তুলতে হলো অর্জুন আর মদনের গান। আমার সামনে নেচে চলতো দিল্লী-প্রবাসী চপলা চঞ্চলা যুবতীরা। তখন তো পূর্ণ যৌবন – স্বপ্নমদির নেশায় নেশায় গানের পরে গান ভেসে চলতো। কোনো ক্লান্তি ছিল না, অবসাদ ছিল না। এই নাটকের প্রচুর মহড়া হলেও অনুষ্ঠানের দিন কিন্তু মঞ্চে প্রচুর ভুলভাল হয়েছিল। মাইক ঠিক মতো কাজ করেনি, বাজনদারেরা ঠিকমতো বাজায়নি, আমাদেরও একের সাথে অন্যের ধরা-ছাড়ার অনেক ত্রুটি ছিল। তবু সে ছিল এক প্রবল উৎসাহের অনুষ্ঠান। প্রবাসে আমার এক প্রতিষ্ঠা। সব মিলিয়ে দেখলাম যে প্রবাস জীবন মন্দের নয়। সেখানে ভালোলাগা আছে, ভালোবাসা আছে, আছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, পূর্ণমাত্রায়।
|
পূর্ব দিল্লীর রবীন্দ্র জয়ন্তী, ২০১৭ |
সেই তো হলো সূচনা। তারপর একে একে ডাক পেলাম আরও নানান কিছুর। বাংলায় থাকতে চতুর্দিকে অত রবি ঠাকুরকে দেখিনি। হয়তো তিনি ছিলেন, কিন্তু খুব আশেপাশে নয়। ইচ্ছে করলেই তাঁকে পাওয়া যেত বলে হয়তো আমার চারপাশের মানুষের মনে পাওয়ার অত আকাঙ্খা ছিল না। কিন্তু এই প্রবাস জীবনে তিনি দেখা দিলেন চারহস্তে। তাঁর শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম কেবল ঘুরে চলেছিল প্রকাশের অপেক্ষায়। পূর্ব দিল্লীর পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের রবীন্দ্র জয়ন্তী উৎসবে আবার দেখা মিললো তাঁর। সেজন্য শুরু হলো আবার মহড়া। সামান্য বেতনের চাকরি করতাম। অত নানান অনুষ্ঠানে পরার পাঞ্জাবি মিলবে কোথায়? যেটুকু ছিল, তাতেই কেচেকুচে কাজ চালাতাম। অবশ্য এসবে কিছুই যায় আসতো না। গানের মত্ততায় ভেসে যেত সব কিছু। কতজনের সাথে পরিচয় হলো এই গানের সূত্রে, দেখা মিললো কত বন্ধুর। জীবনে দুঃখের অন্ধকারে তারা আমাকে আশ্রয় দিলো, আগলে রাখলো। সব কিছু সেই দিল্লী প্রবাসী রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে। এরই মধ্যে কীবোর্ড শিল্পী মানস চ্যাটার্জির সাথে একসঙ্গে থাকা শুরু করলাম ময়ূর বিহারের অন্য এক আবাসনে। স্বভাবশিল্পী এই মানুষটি ছিল আমার বড়ো ভাইয়ের মতো। তাঁর বাড়ি ছিল শান্তিকেতনের কাছেই সিউড়িতে। রান্নাবান্না আর খাওয়াদাওয়া হয়ে গেলে ছাদে বসে আমরা নানান গল্প করতাম। সে ছিলো এক প্রবল আনন্দের অবসর। মানসদা দিল্লীর অনেক শিল্পীর সাথে পুজোর অনুষ্ঠানে কীবোর্ড বাজাতো। আমি ওর কাছে শুনতাম সেসব অনুষ্ঠানের গল্প, আর শিল্পীদের গল্প। শান্তিনিকেতনের নানান রসযুক্ত গল্পও থাকতো সেখানে। ওনার সূত্রেই দিল্লীর কিছু গুণী কণ্ঠশিল্পীদের সাথে পরিচয় হয়, তাঁদেরই অন্যতম হলেন শ্রীমতী আবির ব্যানার্জি এবং শ্রীমতী দূর্বা ভট্টাচার্য। এঁদের মাধ্যমেই দিল্লীর নানান রবীন্দ্র বিষয়ক অনুষ্ঠানে গানের সুযোগ পাই। কলকাতা থেকে দেড়হাজার কিলোমিটার দূরের শহর হলে কি হবে, এখানে বাঙালিদের কোনো মিলনস্থল হলেই দেখতাম রবীন্দ্রনাথকে। ছিল পঁচিশে বৈশাখের বার্ষিক অনুষ্ঠান, পয়লা বৈশাখ, পুজোর সান্ধ্য অনুষ্ঠান, ঘরোয়া আসর, আরো কত কি। ময়ূর বিহারে বাঙালিদের আরো একটি ক্লাব মিলনীতেও হতো রবীন্দ্র চর্চা। এই সংস্থার সভ্য-সভ্যারা অনেকেই কি যে ভালো গান করতেন। তাদের কাছেও শিখতাম অনেক কিছু। সমৃদ্ধ হতাম এই সব কিছুতে।
|
দিল্লীর শিল্পীদের সাথে শ্রী সুধীর চন্দ, ২০১৫ |
বিভিন্ন সময়ে কলকাতা, শান্তিনিকেতন এবং ঢাকা থেকে শিল্পীদের আনিয়ে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো দিল্লীতে। লোদি রোডের ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে শুনেছি কত গুণী রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীদের গান – তাঁদের মধ্যে আছেন মিতা হক, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লাইসা আহমেদ লিজা, অদিতি মহসিন, মোহন সিং। শান্তিনিকেতন পাঠভবনের শিল্পীরা একবার ওখানকার বাগানে চণ্ডালিকার অভিনয় করেছিল। রবীন্দ্রনাথের ১৫০-তম জন্মজয়ন্তীতে দিল্লীর নানান প্রেক্ষাগৃহে শুনেছি কত অসাধারণ সব অনুষ্ঠান। ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগে সংগীত ভবন থেকে হয়েছিল ভানুসিংহের পদাবলী। সে কি চমৎকার অভিনয়,নৃত্য আর গান। মনে আছে, লাইসা আহমেদ লিজার গান শুনে একবার ওনাকে বলেছিলাম, “আপনার গান শুনলে মনে হয় সেই সব অবিস্মরণীয় শিল্পীদের গান শুনছি যাদের সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি”। লাইসা বিনয় সহকারে বলেছিলেন তিনি তাঁদের মতো হয়ে উঠতে পারেননি। ১৫০-তম জন্মজয়ন্তীতেই কথক গুরু শ্রীমতী গীতাঞ্জলি লালের ছাত্রছাত্রীরা করেছিল চিত্রাঙ্গদা, নৃত্যাচার্য যতীন গোস্বামীর ছাত্রছাত্রীরা করেছিল অহমিয়া ভাষায় চণ্ডালিকা। কি যে মঞ্চসফল হয়েছিল সেসব অনুষ্ঠান আজও ভাবলে মন ভরে ওঠে।
|
বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের রবীন্দ্র জয়ন্তী, ২০১৫ |
দিল্লীর রবীন্দ্র চর্চায় বিশেষভাবে নাম করতে হয় বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের। রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানের প্রভাতী অনুষ্ঠান সাহিত্য একাডেমির রবীন্দ্রভবনে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। তারপর থেকে নিয়মিত হয়ে আসছে। এই প্রভাতী অনুষ্ঠান তো দিল্লীর বঙ্গ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে এক হয়ে গেছে। কত প্রবাসী প্রতিভাবান শিল্পীদের গান শুনেছি এখানে, কত অনাবিল আনন্দ পেয়েছি। তাঁদের মধ্যে আছেন রোশনি ব্যানার্জি, দূর্বা ভট্টাচার্য, জয়তী ঘোষ, নন্দিনী সেন, সুভদ্রা দেশাই, রঞ্জিনী সিংহ, আরো কত জনে। এই অনুষ্ঠানেই তো শুনি মুক্তমনের ছোট্ট শিল্পীদের কচি গলায় মনমাতানো সব গান। নিজেরা হারমোনিয়াম বাজিয়ে, মন্দিরা বাজিয়ে পরিবেশন করেছে সব কিছু। এই অনুষ্ঠানেই দেখতে পাই দিল্লীর বাংলা ইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের, আর শুনতে পাই তাদের সমবেত গান। দিল্লীর সংগীতগুরু প্রয়াত শ্রী সুধীর চন্দ প্রতিবছর উপস্থিত থেকে সব শিল্পীদের উৎসাহ যোগাতেন এখানে। এই রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে রাজধানীতে রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষের মিলন ক্ষেত্র। আজও তার ব্যতিক্রম নেই।
|
রবীন্দ্র ভবন, দিল্লী, ২০১৯ |
বিবাহের পরে যাঁকে সহধর্মিনী রূপে পেলাম তিনিও গানের ভক্ত, এবং রবীন্দ্রনাথের। অতএব প্রবাস জীবনে গানের চর্চা পিছিয়ে থাকলো না। দূর্বাদির কাছে নতুন উদ্যমে আবার গান শেখা শুরু হলো। প্রতি রবিবার সকালে রিকশায় চেপে বসুন্ধরা এনক্লেভে তাঁর ফ্ল্যাটে যেতাম। খাতায় গান লিখে শিখতে হতো, গাইতে হতো সেসব গান। কত কি গানের সম্ভার অর্জন করি এই ক্লাসে। বাসার পরিবর্তন করে দিল্লীর থেকে খানিকদূরে গ্রেটার নয়ডায় স্থানান্তরিত হই ২০১৩ সালে। এই নতুন শহরে আবার কাউকে চিনতাম না। ভেবেছিলাম, আবার সব কিছু পিছনে ফেলে আসা হলো। দিল্লীতে ফিরে গিয়ে আর কি সব হবে। কিন্তু তা তো হলো না। প্রবাসী রবীন্দ্রনাথ আবার এসে হাত ধরলেন আমার। প্রেমিককে কি পিছু ছাড়া যায়? ধীরে ধীরে আবার যোগাযোগ হলো কিছু সংগীত উৎসাহী মানুষের সঙ্গে। দুটো একটি করে আসরে গান গাওয়া শুরু হলো। সকলে মিলে বসে তার প্রস্তুতি করাও তো কত আনন্দের। আমরা কয়েকজন মিলে বিহান নামের একটি ছোট সংস্থাও করে ফেললাম। ফুলের সুগন্ধে মধুকরের মতো আসতে লাগলেন আরো কিছু সমঝদার মানুষ এবং শিল্পী। ২০১৮ সালে সকলে মিলে শুরু করা হলো পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষে এক প্রভাতী পদযাত্রার। এই প্রবাসে দেখা মিললো এক খোল বাদকের। সকালের আলোয় আমাদের গাওয়া “এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিলো দ্বার” এই গানের সাথে মিলে গেলো তার খোলের বোল। আবার এক পথ চলা শুরু হলো রবি ঠাকুরের হাত ধরে। আবার কত নতুন বন্ধু এসে মনের দরজায় এসে কড়া নাড়লো। ২০১৯ সালে আমরা মঞ্চস্থ করলাম রবীন্দ্র নাটক নটীর পূজা। মাসাধিক কাল ধরে সেই নাটকের প্রস্তুতি চলেছিল। সকলের কত উৎসাহে সবকিছু সম্পন্ন হয়েছিল সুষ্ঠভাবে। আমাদের শ্রদ্ধেয়া দিদি শ্রীমতী রমা জোয়ারদার তাঁর খালি ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দিয়েছিলেন আমাদের অভিনয়ের জন্য। কেন যে এতো কিছু হয় সব কি আমরা বুঝি।
|
শতকণ্ঠে রবি গান, ২০২৪ |
প্রকৃত শিল্পী না হয়েও প্রবাস জীবন আমাকে দান করে এক শিল্পী সত্বার। এই শহর আমাকে উৎসাহ দেয় আরো নতুন কিছু শেখার। সম্প্রতি দিল্লীর কামানি প্রেক্ষাগৃহে হওয়া শতকণ্ঠে রবিগান তো আরো একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নতুন পুরানো মিলিয়ে কত গান যে নতুন করে শিখেছি এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে। সেই অভিজ্ঞতা সত্যিই স্মরণীয়। এতো একনিষ্ঠভাবে স্বরলিপির পাঠ সম্ভবতঃ আমার জীবনে এই প্রথম। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা সারা ভারত জুড়ে যে আয়োজন করেছিলেন তা তো এক নতুন পথের দিশারী। আমরা পিছিয়ে যাওয়া বাঙালিরা আমাদের জাতি সত্ত্বা, সাংস্কৃতিক সত্ত্বা প্রায় ভুলতে বসেছি। অন্য ভাষার সাথে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে নিভে যাচ্ছে অনেককিছু। তার থেকে উত্তরণের পথ তো খুঁজে নিতে হবে বাঙালিকেই। রবীন্দ্রনাথ তো বাঙালির ঘরের মানুষ, তারপরে তিনি বিশ্বমানব। তাকে নিয়েই তো কতকিছু সৃষ্টিমূলক কাজ হতে পারে। বিশ্বায়নের সময়ে বাঙালি ছড়িয়ে পড়েছে নানাদিকে, বাংলার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূরে। রাজধানী দিল্লী শুধু ভারতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র নয়, এখানে আছে নতুন শিল্প মাধ্যমের অনেক কিছু উপকরণ। বাংলা ভাষাকে যারা ভালোবাসে, তারা এখানেও অনেককিছু করতে পারে। সেই চেষ্টা ক্রমাগত চলছেও। শুধু রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই নয়, তবে তিনি তো আমাদের সৃষ্টিশীল কর্মের প্রধান পথপ্রদর্শক। তাঁকে নিয়েই দিল্লীর সাংস্কৃতিক মণ্ডলী আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে, সেই আশা রাখি।
বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান, ২০০৯
Opurbo lekha. Sharthok tomar gaaner shonge ekatmo hoye thakar probol ichha o mononsheelota. Tomar cholar powth aro shugom hok, ei Katona kori.
ReplyDeleteSouparno
ধন্যবাদ, সৌপর্ণ।
Deleteলেখাটা পড়তে পড়তে কত সুখস্মৃতি যে মনের কোণে উঁকি দিয়ে গেল! খুব ভাল লাগলো শুভ।
ReplyDeleteManush Jakey sattikare bhalobasey, takey bhalobashar sujog kimba madhoyom se thik khuje bar korbey. Tumi abaro setai proman korle. Aei bhalobasa, abolombon- k sangi kore egiye cholo…
ReplyDeleteখুব খুব ভালো লেখা।আগামী তে এমন আরও লেখা পেতে চাই। আরও ভালো অনুষঠান কর।
ReplyDeleteসম্মিতা চ্যাটার্জি।
শুভদীপ একজন আদ্যপান্ত সুন্দর মানুষ আর লেখাতেও তার প্রভাব থাকে। আমার দীর্ঘ সময় দিল্লি বাসের অভিজ্ঞতা একই কথা বলে। রবীন্দ্র চর্চা শুভদীপের থেকে সুন্দর করে বলতে পারে বা অনুভব করতে পারে এমন মানুষ আজকের দিনে বিরল।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল। রবীন্দ্রময় স্মৃতিপট। এইরকম ভাবেই তিনি নানাজনের মনে আনন্দ বুনে দিয়েছেন। আজও দিচ্ছেন। আপনার লেখাটি খুব আন্তরিক হয়েছে। আমার শুভেচ্ছা নেবেন।
ReplyDeleteশুভদীপ ,ঋষিকবি রবীন্দ্রনাথ তোমার জীবনদেবতা। তাই এই স্মৃতিচারণ নিবেদনে নিলীন।খুব ভাল লেগেছে।
ReplyDeleteপ্রতিবেদনের অপেক্ষায়
কাবেরী মাসি।
খুবই ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই লেখাটি। অনেক অভিনন্দন।
ReplyDeleteশুভদীপ, সাধু সাধু সাধু!
ReplyDeleteতোমার জীবন দেবতা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ। যিনি একাধারে দেবতা আবার একাধারে পরম বন্ধু সখা, পরম ধন।
তোমার লেখার এত শক্তি যে কি বলি। কি সুন্দর সহজ সরল ভাষায় প্রকাশ।
তোমার লেখাটি পড়ে একটা গান মাথায় ঘুর ফির করছে।
“কত অজানারে জানাইলে তুমি কত ঘরে দিলে ঠাঁই।”
আরো অনেক লেখো। ভালো থেকো তোমার জীবন দেবতা কে নিয়ে।
কাবেরী দি ( চট্টোপাধ্যায়)
খুব সুন্দর হয়েছে লেখাটা
ReplyDeleteচমৎকার লিখেছ।খুব ভালো লাগল।আমরা একসাথে কত প্রোগ্রাম করেছি,সেসব কথা মনে পড়ল।
ReplyDeleteরমা জোয়ারদার।
খুবই সুন্দর লাগলো লেখাটা। কতো কিছু জানতে পারলাম। আরো লিখতে থাকো।
ReplyDeleteসাধনা সরকার।
জীবনের অনেকগুলো বছর কলকাতার বাইরে কাটিয়েছি। লেখার প্রতিটি শব্দ পড়তে পড়তে চোখের সামনে ভেসে উঠছিল একের পর এক চিত্র। অবশ্যই এ লেখনীর শক্তি, যা আমাকে এভাবে নস্টালজিক করে তুলেছে।
ReplyDeleteশুভদীপ, যার সখা স্বয়ং কবি, তার জীবন সুরেই বাধা হবে, ছবিও রঙীন থাকবে, জীবনের প্রতিক্ষণ ছন্দেই চলবে।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। ❤️🙏🏼
তোমার প্রবাসী জীবন পড়লাম ও জানলাম। খুব সুন্দর গুছিয়ে লিখেছো শুভদীপ। রবিঠাকুর কে নিজের করে পাবার ইচ্ছা থাকলে যোগাযোগের যে কোনো অভাব যে হয় না, তা তোমার লেখায় স্পষ্ট। তিনি ই তোমাকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আরো ভালো কাজ করো আর আনন্দে থেকো।
ReplyDeleteখুহ সুন্দর লিখেছো শুভদীপ । তোমার পুরানো দিনের মধুর স্মৃতি । এমনি করেই এগিয়ে চলো । শুভেচ্ছা রইলো ।
ReplyDeleteতোর প্রবাসী জীবনও যে এত সুন্দর বাঙালিময় জেনে মন ভরে গেলো । আপ্লুত হলাম । মনে পড়লো প্রেসিডেন্সি কলেজের অনুষ্ঠানের দিন গুলো ।রবিজী কে সাথী করে আরও সুন্দর হোক এই প্রবাসী জীবন।
ReplyDelete