শকুন্তলা: রূপ থেকে রূপান্তরে
সর্বঃ কান্তমাত্মীয়ং পশ্যতি। (সকলেই নিজের লোককে সুন্দর দেখে।)
— কালিদাস
কালিদাসের কালে জন্ম নিয়ে যে মঞ্জরিত কুঞ্জবনের স্বপ্নে মেতেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তারই একপ্রান্তে বাস ছিল বনবালা শকুন্তলার। পাখির পক্ষছায়ায় লালিত সেই কন্যা বনফুলের মতো কোমল। সমগ্র বনভূমি তাঁর মাতৃভূমি, বনের পশু, পাখি, তরুলতার সাথে তাঁর সোদর স্নেহের সম্পর্ক। তিনি গাছে জল না দিয়ে নিজে জলপান করেন না, অলংকার ভালোবাসলেও গাছের পাতাটি ছেঁড়েন না। অরণ্য প্রকৃতির সব কিছু তাঁর অতি আদরের, তাঁর কাছে অতি মূল্যবান। হরিণ শিশু তাঁর আঁচলের প্রান্ত টেনে নিয়ে বলে তাকে যেতে দেবে না। তিনি পতিগৃহে যাত্রা করলে সমগ্র বনভূমি তাঁর বিচ্ছেদ বেদনায় কেঁদে ওঠে। কালিদাসের "শকুন্তলা" নাটকে প্রকৃতির সাথে মানব চরিত্রের এই অখণ্ড সম্পর্ক মুগ্ধ করেছিলো প্রকৃতির কবি রবীন্দ্রনাথকে। বর্তমান প্রবন্ধের উদ্দেশ্য শকুন্তলার অন্বেষণ -- কি করে কালের যাত্রাপথে রূপান্তরের পথে চলেছেন এই সাহিত্যকীর্তির নারী।
ছবি ১: শকুন্তলা, রাজা রবি বর্মা |
সংস্কৃত নাটক "শকুন্তলা" কবি কালিদাসের একান্ত নিজস্ব সৃষ্টি নয়। তিনি শকুন্তলার কাহিনীকে পরিবর্ধিত এবং পরিবর্তিত করেছেন; নাট্যসৃষ্টির প্রয়োজনে তাঁর মধ্যে বিভিন্ন মানবিক গুণ প্রকাশ করেছেন। বস্তুতপক্ষে "শকুন্তলা" কাহিনীর উৎস আরও পূর্বে – বৈদিক গ্রন্থ "শতপথ ব্রাহ্মণ" এবং তার পরবর্তী কালে মহাভারতের আদি পর্বে, যেখানে পাণ্ডব কৌরবের পূর্ব পুরুষের বিশদ পরিচয় দেওয়া হয়েছে। "শতপথ ব্রাহ্মণ" পর্বে শকুন্তলাকে পাওয়া যায় ভরতকুলের স্থপতি রাজা ভরতের মাতা রূপে। বলা হচ্ছে, অপ্সরা শকুন্তলা ঋষি কন্বের আশ্রম নাদপিঠে ভরতকে গর্ভে ধারণ করেন। দুষন্তের পুত্র এই ভরত এক বিরাট অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন এবং দেবরাজ ইন্দ্রকে সুবিশাল আহুতি দেন। যজ্ঞের আয়োজক এই শ্রেষ্ঠ রাজার মা হিসাবে শকুন্তলা ছিলেন বন্দিতা। এইটুকুই তাঁর পরিচয়। আরও পরবর্তীকালে মহাভারতের আখ্যানে আসে তাঁর আরও স্পষ্ট পরিচয়। ইতিহাসবিদদের মতে মহাভারতের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সন থেকে ৪০০ খ্রিষ্টাব্দ এই ৮০০ বছর। মহাভারতের বহু কাহিনী আখ্যানের প্রক্ষেপণ হয়েছে এই সময়কালের মধ্যে। ঠিক কোন সময়ে ভরতমাতা শকুন্তলার আখ্যানটি যুক্ত হয়েছে, তা অবশ্য বলা যায় না। তবে কাহিনীটি বৈদিক যুগের সমাজে নারীর অবস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র। রাজা জনমেঞ্জয় আর ঋষি বৈশম্পায়নের আলোচনায় উঠে এসেছে এই কাহিনী। ঋষি বলছেন পরম প্রতাপশালী রাজা দুষন্ত যখন পৃথিবীর ভার গ্রহণ করেছিলেন, শস্যে সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল এই ধরিত্রী। তিনি ছিলেন দেবরাজ ইন্দ্রের সাথে তুলনীয়। একদিন বনমধ্যে শিকার কালে সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে পড়েন তিনি। পথশ্রমে, ক্ষুধায়, পিপাসায় ক্লান্ত হয়ে এক ঋষির তপোবনে উপস্থিত হন। সে এক বিচিত্র স্থান, যেখানে শীতল বাতাস বইছে, গাছে গাছে ফুটে আছে অজস্র ফুল, পাখির কুহুরব শোনা যাচ্ছে। এক অনাবিল আনন্দে পূর্ণ হলো রাজার হৃদয়। তিনি বুঝলেন মালিনী নদীর তীরে এই অপরূপ স্থানটি কন্ব ঋষির আশ্রম। কৌতুহলী রাজা সেই আশ্রমের গভীরে প্রবেশ করে শুনলেন বেদমন্ত্রের সুমধুর পাঠ। ঋষির দর্শনলাভের আশায় তিনি উপস্থিত হলেন তাঁর কুটিরের সামনে। এই সময় সাক্ষাৎ স্বর্গমন্ডিত শ্রীর মতো তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন শকুন্তলা। রাজার প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন যে ঋষি গেছেন বন থেকে ফল সংগ্রহ করতে। রাজা তাঁর ফিরে আসা অবধি অপেক্ষা করতে পারেন। দুষন্ত মুগ্ধ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলেন এই অপরূপ ঋষিকন্যাকে। তিনি জানতে চাইলেন তাঁর পরিচয়। শকুন্তলা জানালেন তাঁর অদ্ভুত জন্মবৃত্তান্ত। বিশ্বামিত্রের তপস্যাভঙ্গ করতে ইন্দ্রের দ্বারা প্রেরিত হন স্বর্গের অপ্সরা মেনকা। সেই মিলনে জন্ম হয় তাঁর। অপ্সরা সন্তানের অধিকারলাভে বঞ্চিতা। তাই জন্মমাত্রে তাঁকে পরিত্যাগ করে স্বর্গে ফিরে যান মেনকা। সেই সদ্যজাত শিশুকে রক্ষা করে অরণ্যবাসী পাখিরা। অতঃপর মালিনী নদীর তীরে এই শিশুকে খুঁজে পান ঋষি কন্ব এবং তাঁকে আপন কন্যার সমাদরে আশ্রমে পালন করেন। রাজা দুষন্ত এই কাহিনী শুনে আকৃষ্ট হন শকুন্তলার প্রতি; তাঁকে বিবাহ করতে চান। শকুন্তলা জানান ঋষি আশ্রমে ফিরলে রাজা তাঁকে বিবাহ প্রস্তাব দিতে পারেন। কিন্তু অপেক্ষা সয় না রাজার। গান্ধর্বমতে সেই আশ্রমে তখুনি বিবাহপাশে আবদ্ধ হতে চান। শকুন্তলা আপত্তি করেন না, তবে একটি গুরুতর শর্ত রাখেন। এই গোপন বিবাহের যে পুত্র জন্মাবে, তাকে পুরুবংশের উত্তরাধিকারী ঘোষনা করতে হবে রাজার। কামমত্ত রাজা কিছু না ভেবেই সেই প্রস্তাবে রাজি হন। তখুনি সম্পন্ন হয় গান্ধর্বমতে সেই গোপন বিবাহ। শুধু পুরুষ ও নারীর অনুমতিতে তা সাধিত হয়। মিলনশেষে রাজা বলেন যে তিনি শীঘ্রই শকুন্তলাকে তাঁর রাজ্যে নিয়ে যেতে রাজসেনাবাহিনী পাঠাবেন। এই বলে তিনি আশ্রম ত্যাগ করেন এবং রাজ্যে ফিরে যান। সাধনঅর্জিত দৈবতপের বলে ঋষি আগে থেকেই জানতে পারেন শকুন্তলার বিবাহের কথা। আশ্রমে ফিরে তিনি বলেন, "গান্ধর্ব বিবাহ হলো শ্রেষ্ঠ বিবাহ, যাতে শুধু প্রেমী পুরুষ ও নারীর সম্মতির প্রয়োজন হয়। শকুন্তলার এই গুপ্ত বিবাহের ফল হবে এক মহাপরাক্রমশালী পুত্র।" তিনবছরব্যাপী গর্ভধারণের পর পুত্রের জন্ম হয়। ঋষি তার নামকরণ করেন সর্বদমন। পুত্রের ছয় বছর বয়সে ঋষি স্থির করেন রাজার কাছে পাঠাতে হবে পুত্রসহ শকুন্তলাকে। এই সময়ের মধ্যে দুষন্ত একটি বারের জন্যও শকুন্তলা বা পুত্রের কোনো খোঁজ নেননি। আশ্রমের কিছু ঋষিকুমারের সাথে শকুন্তলা উপস্থিত হন রাজার সম্মুখে। তিনি অনুরোধ করেন রাজা যেন পুত্রকে স্বীকার করে নেন। কিন্তু দুষন্ত শকুন্তলাকে না চেনার ভান করেন। অপমানের এই প্রেক্ষাপটে এক নতুন রূপ ফুটে ওঠে অপ্সরাকন্যার। ক্রোধে জ্বলে ওঠেন তিনি। রাজাকে দৃপ্তকণ্ঠে বলেন, "আপনার মন জানে কি সত্য। কিন্তু আপনি মিথ্যাবাদী।" তিনি রাজাকে স্মরণ করান অপ্সরা গর্ভে তাঁর দিব্যজন্মের কথা। এই সময় শকুন্তলার মুখে ফুটে ওঠে মায়ের প্রতি তাঁর অভিমান। জন্মমাত্রেই তিনি পরিত্যক্তা, মাতৃস্নেহ বঞ্চিতা। দুষন্ত আর শকুন্তলার কথাবার্তায় ফুটে ওঠে সমকালীন সমাজে নারীর অবস্থান। রাজা শকুন্তলাকে প্রতি আক্রমণ করেন স্বর্গের এক পতিতার কন্যা হিসাবে। বলেন, "পতিতার কন্যা তো পতিতাই হবে, আর তাদের কথায় বিশ্বাস করতে নেই।" চরম অপমানেও শকুন্তলা নারী বলে চুপ করে থাকেননি। তাঁর জন্ম যে দিব্য প্রভাবে, রাজজন্মের অনেক উর্ধ্বে সেকথা স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, "যখন আপনি আপনার পুত্রকে গ্রহণ করবেন না বলে স্থির করেছেন, আমি আর আপনাকে অনুরোধ করবো না। কারণ আপনার সাহায্য ছাড়াই আমার পুত্র রাজচক্রবর্তী আখ্যা পাবে।" সর্বদমনের হাত ধরে যখন শকুন্তলা রাজদরবার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তখন এক দৈববাণী হয়। সর্বসমক্ষে রাজা শোনেন, "তোমার বীজে এই সন্তানের জন্ম। শকুন্তলা সত্যবাদিনী। সন্তানসহ শকুন্তলাকে গ্রহণ করো। তোমার এই পুত্র খ্যাত হবে ভরত নামে।" সম্বিত ফিরে আসে রাজার। পুত্রকে আলিঙ্গন করে শকুন্তলাকে বলেন তাঁর গুপ্ত বিবাহের কথা রাজ্যবাসী জানেন না। তাই শকুন্তলার সাথে তর্ক করে তিনি রানী হিসাবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন। তখুনি ভরত নামে রাজপুত্র সর্বদমনের অভিষেক করেন। ভরতের বংশ থেকে প্রতিষ্ঠা হয় ভারত নামে এক জাতির। মহাভারতের শকুন্তলা আখ্যান এখানেই শেষ হয়। রামায়ণের নায়িকা সীতার মত অগ্নিপরীক্ষা দিতে অথবা দ্বিতীয়বার তাতে রাজি না হয়ে ধরিত্রী মাতার গর্ভে আশ্রয় নিতে হয়নি তাঁকে। দুষন্ত তাঁকে বেশ্যা বলে অপমান করেছেন, কিন্তু তপোবনে শিক্ষার ফলে শকুন্তলা তাঁর স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ থেকে সরে আসেননি। দুই মহাকাব্যেই অরণ্যবাসী এবং নগরবাসী এই দুই সমাজের স্পষ্ট বিভেদ চিত্রিত আছে। মহাভারতের কবি শকুন্তলাকে এক স্বাধীন মুক্ত মনের নারী হিসাবে দেখিয়েছেন। তিনি পুরুষের ভোগ্যা নন, নিজের মনের ভাবকে সহজে স্বাধীন চিত্তে প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখেন। একই মহাকাব্যের অন্য তিন নারী দ্রৌপদী, কুন্তী এবং গান্ধারী নিজেদের মত প্রকাশ বলে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছেন কাব্যে। তাঁদের অস্থিত্ব কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। শকুন্তলা তাঁদের যোগ্য পূর্বসুরী। লক্ষ্য করার বিষয় হলো এঁদের প্রত্যেকেরই পুত্র জন্ম দেওয়ার গৌরব। শকুন্তলা অপুত্রক রাজাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে শাস্ত্র মতে পুত্রজন্মের মধ্যে দিয়েই মানবজন্ম সাধন হয়। পুত্র মানব জীবনের কালিমা দূর করে, তাকে নরক গমন থেকে উদ্ধার করে। শকুন্তলা স্বাধীন চিত্তের অধিকারিণী, কিন্তু তিনি পুত্র সন্তানের জন্মে গর্বিতা। ভাবার বিষয় সর্বদমণের পরিবর্তে শকুন্তলার এক কন্যা জন্মালে তার পরিণতি কি হতো। হয়ত মায়ের মতই তাকেও পরিত্যাগ করা হতো মালিনী নদীর তীরে গভীর অরণ্যে। অন্য কোনো পক্ষি মাতার স্নেহে লালিত হতো তাকে। কারণ পশুপক্ষী তো পুরুষ নারীর কোনো বিভেদ জানে না।
ছবি ২: শকুন্তলা ও সখীরা, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
মহাভারত থেকে এবার আসি মহাকবি কালিদাসের নাটক "অভিজ্ঞানশকুন্তলম্" প্রসঙ্গে। কালিদাসের প্রকৃত সময় নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিশেষ মতভেদ আছে। বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন ভাবে এই অসামান্য কবি নাট্যকারের সময় নির্ণয় করেছেন। বেশিরভাগের মতে কালিদাস গুপ্ত রাজাদের কারোর সভাকবি ছিলেন। গুপ্তযুগের বিস্তার ৩০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ। অর্থাৎ কালিদাস এই সময়ের কবি; মহাভারতের সময়ের কিছু পরে। সমাজ তখন বেশ খানিকটা পরিবর্তিত হয়েছে। নারীর অবস্থান এবং নারীকে দেখার প্রয়াস হয়েছে আলাদা। মোট তিনটি নাটক এবং তিনটি কাব্যের রচয়িতা তিনি। প্রতিটি সৃষ্টিই সংস্কৃত সাহিত্যের উৎকৃষ্ট রত্ন এবং পৃথিবীর সাহিত্যে বিশেষ ভাবে সমাদৃত। আমরা সরাসরি আসবো তাঁর অখণ্ড প্রেমকাহিনী শকুন্তলায়। বলা হয় -- "কালিদাস্য সর্বস্বং অভিজ্ঞানশকুন্তলম্।" অর্থাৎ কালিদাসের সর্বস্ব এই নাটকটি। কাহিনী সূত্র মহাভারতের আদিপর্বের সেই ছোট অংশটি। তবে দুটি কাহিনীর প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা। মহাভারতকারের লেখনীতে শকুন্তলা তাঁর নারীত্বের ব্যঞ্জনায় ততটা গুরুত্বপূর্ণ নন, যতটা না তাঁর মাধ্যমে ভরত বংশের প্রতিষ্ঠা। শকুন্তলা নামক নারী সেখানে নেহাতই উপলক্ষ মাত্র। মহাভারতের কবি তাঁর গর্ভে স্থাপন করেছেন পুরুকুলের আদি পুরুষকে। তাঁর নারীত্বের দাবি স্পর্ধিতভাবে শোনা গেলেও তা মহাকাব্যের বহমানতায় ক্ষীণ হয়ে গেছে। কিন্তু কালিদাস শকুন্তলাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সৌন্দর্যের অনিন্দ্য সিংহাসনে। তিনিই নাটকের চালিকাশক্তি; এমনকি তাঁর পুত্র জন্মের সৌভাগ্যও গৌণ। তাঁর ব্যক্তিগত কাম, মোহ, প্রেম, বিরহ, ত্যাগ ও মিলন এই নাটককে রসলোকের উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছে। বলা যায় মহাকাব্যের পরিচিত কাহিনীটির আশ্রয় কালিদাসের কিছু ব্যতিক্রমী প্রয়াস নয়। তাঁর পূর্বসুরী নাট্যকার ভাস রামায়ণ এবং মহাভারতের বেশ কয়েকটি কাহিনীকে নাট্যরূপ দিয়েছেন। যুগোত্তীর্ণ সাহিত্যকে সমকালীন রূপে দেখা কবি, নাট্যকার, সাহিত্যিকের ধর্ম। রবীন্দ্রনাথ যেমন রামায়ণের কাহিনী সূত্রে নির্মাণ করেছেন তাঁর "বাল্মীকি প্রতিভা" অথবা বৌদ্ধ অবদান শতকের ক্ষুদ্র কাহিনী থেকে "চন্ডালিকা", কালিদাসের "শকুন্তলা" তেমনি মহাভারত কাহিনীর এক যুগোপযোগী নির্মাণ। তবে স্রষ্টার হাতে পরিবর্তিত হয় বহুকালের শ্রুত কাহিনী। কালিদাস তাঁর নাটকে এনেছেন অভিশাপ ও অভিজ্ঞান পর্বটি। মূল মহাভারতের কাহিনীতে তা নেই। শুধু এটুকুই নয়, তপোবনে লালিত শকুন্তলার প্রকৃতিময়তা এই নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য। সরলা, লজ্জাশীলা বালিকা শকুন্তলা এই নাটকে শুধু অরণ্যবাসিনী নয়, সমগ্র তপোবন অরণ্য তাঁর পরম আত্মীয়। সমালোচকদের মতে তপোবন এই নাটকের অন্যতম চরিত্র। শকুন্তলার কোমল স্বভাবের অস্থিত্বটি গভীর করার জন্য উপস্থিত রয়েছে তাঁর দুই প্রিয় সখী অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা। রয়েছে আরও বিভিন্ন চরিত্র, মহাভারত কাহিনীতে যাঁদের উল্লেখ নেই। ঋষি কন্বের দুই শিষ্য শাঙ্গরব আর শারদ্বত এরা শকুন্তলার পতিগৃহ গমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। গুরুর আদেশ পালন করে তাঁকে রাজার ভবনে রেখে এসেছে, এবং রাজা শকুন্তলাকে প্রত্যাখ্যান করায় রাজাকে তাঁর কৃতকর্মের জন্য তিরস্কার করেছে। এই দুই ঋষিকুমার অনসূয়া আর প্রিয়ংবদার মতো তপোবনের শান্ত, সহজ জীবনচর্যাকে বাস্তবযোগ্যতা দিয়েছে। সাত অঙ্কের এই মিলনান্তক নাটকে পাঠক লাভ করে ছবির পর ছবি। প্রথম অঙ্কে রাজার তপোবনে প্রবেশ থেকে শকুন্তলার দর্শন পাঠকের মনকে সজাগ করে রাখে। সখীদের নিয়ে শকুন্তলার জলসেচন আর কুঞ্জের গাছপালার মাঝে লুকিয়ে থেকে রাজার তাকে দেখা ও মনের ভাব সব কিছুর অতি সুক্ষ অনুরণন আছে এই নাটকে। অনসূয়া যখন জানায় যে শকুন্তলা তাঁর নবমল্লিকার নাম রেখেছে বনজ্যোৎস্না, এবং তার মিলন ঘটিয়েছে আমগাছের সাথে, আমরা বুঝি প্রকৃতির তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। দ্বিতীয় অঙ্কের বিদুষক চরিত্রটি নাট্যকাহিনীতে কিছুটা হাস্যরস বিস্তার করেছে। মূল ভূমিকাতে না থেকেও সে রাজার সাথে নিজের সহজ সম্পর্ক প্রকাশ করেছে। রাজাকে অজান্তে তাঁর প্রণয়ীর সাথে মিলনের সুযোগ করে দিয়েছে। অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা যে কাজটি করেছে তাদের সখীর সাথে, রাজার অনুচর হিসাবে সে কাজটিই করেছ বিদুষক। চতুর্থ অঙ্কের শকুন্তলার যাত্রা পর্বটিই এই নাটককে শ্রেষ্ঠতম স্থানে নিয়ে গেছে। ঋষি তাঁর পালকপিতা হয়েও সমগ্র অরণ্য প্রকৃতির কাছে যাত্রার অনুমোদন চেয়েছেন আর কোকিলের মধুর রবকে অরণ্যের প্রত্যুত্তর হিসাবে নিয়েছেন। প্রিয় সখীদের বিলাপ আর গর্ভভারে আনত শকুন্তলাকে অভিজ্ঞানের কথা বলা নাটককে চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বোঝা যায় এই নাটক শুধু আবৃত্তির জন্য নয়, অভিনয়ের জন্য নির্মিত। কাম আর ধর্মের দ্বন্দ্ব, শৃঙ্গাররস আর বীররসের দ্বন্দ্ব নাটকে প্রথম থেকে শেষ অবধি অক্ষুণ্ণ আছে; কিন্তু তার সাথে রয়েছে মানব প্রকৃতির বিচিত্র বিন্যাস। পুরুষার্থ মোক্ষলাভ করবে তখনই যখন ধর্ম, অর্থ, কামের সামঞ্জস্য রক্ষিত হবে -- এই তত্ত্ব নাটকের উদ্দেশ্য হলেও পাঠক শকুন্তলা নাটকে পায় সমস্ত চরিত্রের সমাবেশে এক মানবিক সামঞ্জস্য। তার সাথে আছে কালিদাসের সমকালীন রীতির প্রয়োগ -- যেমন স্ত্রীর ধর্ম, রাজার কর্তব্য ও নানান অর্থনৈতিক বিষয়। বিদুষক যখন রাজাকে বলছেন ঋষির আশ্রম থেকে কর গ্রহণ করা উচিত, রাজা তাকে তিরস্কার করে বলছেন যে আশ্রমগুলির কাজ অর্থকরী ব্যবসা নয়। রাজা রক্ষা করেন আশ্রম, এবং আশ্রমবাসী ঋষিরা রাজা ও রাজ্যবাসীর আত্মিক উন্নতি সাধন করেন। কালিদাসের নাটকগুলি মঞ্চস্থ হতো রাজপ্রাসাদে উচ্চবর্ণের রাজপুরুষদের সামনে। তাই সমাজের প্রশংসনীয় দিকগুলি দেখানোর চেষ্টা থাকতো। শকুন্তলার সলজ্জ ভাবটি রাজার প্রিয়রানীর উপযুক্তভাব বলেই মনে হয়। অন্য রানী হংসপাদিকা রাজাকে শ্লেষ সহকারে বলেছেন তিনি এক নারী থেকে অন্য নারীতে তিনি অতি সহজেই গমন করতে পারেন। মহাভারতের শকুন্তলা প্রথম সাক্ষাতেই তাঁর ভাবী পুত্রের রাজসিংহাসনের দাবি করেছেন। রাজার সাথে শয়নের পূর্বে এই ছিল তাঁর একমাত্র শর্ত। কিন্তু কালিদাসের শকুন্তলা রাজার দর্শনলাভের চরম প্রত্যাশী থেকেও মুখ ফুটে তাঁকে কিছু বলতে পারেননি। নারীত্বের সব আয়োজন রাজার পদপ্রান্তে রাখলেও পরিবর্তে বেশি কিছু আশা করেননি। বিজন ঘরে তিনি রাজার চিন্তায় ডুবে আছেন -- শুধু এটুকুতেই আমরা বুঝি তাঁর মনের অবস্থা। দুর্বাশার তীব্রকণ্ঠের অভিশাপ শুনেছেন তাঁর প্রিয় সখীরা, কিন্তু শকুন্তলা রাজার চিন্তায় বিভোর থেকে তার বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেননি। ঠিক তেমনি রাজার নামাঙ্কিত বহুমূল্য অঙ্গুরিও তাঁর আভরণ নয়। রাজার সাথে মিলনস্বপ্নে তিনি এতটাই ব্যাকুল যে তীর্থের জলে সেই আংটি পড়ে গেলেও তাঁর খেয়াল থাকে না। এই তীব্র প্রেমপ্রত্যাশা কালিদাসের সমকালীন নরপতির হতে পারে। অনেক পণ্ডিতের মতে অভিজ্ঞান অঙ্গুরির সূত্রটি কালিদাস নিয়েছেন সমকালীন একটি জাতক কাহিনী থেকে। নাট্যকাহিনীতে নারীর সামাজিক অবস্থান গোচর হয় আমাদের। শকুন্তলাকে পতি গৃহে পাঠিয়ে ঋষি বলেন, "কন্যা পরের ধন। মনে হচ্ছে গচ্ছিত ধন যেন অধিকারীর কাছে সমর্পণ করছি।" তপস্বিনী গৌতমী শকুন্তলাকে আশীর্বাদ করেন সে যেন রাজার অন্য পত্নীদের মধ্যে প্রধানরানী হয়। পঞ্চম অঙ্কতে রাজার সভায় শকুন্তলার প্রত্যাখ্যানের পরে দুই ঋষিকুমার তাঁকে আশ্রমে নিয়ে যেতে সম্মত হন না। শকুন্তলা কাতর স্বরে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার অনুরোধ করেন। এমনকি তপস্বিনী গৌতমী দুই ঋষিকুমারকে প্রশ্ন করেন, "স্বামী নিষ্ঠুরভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন, এখন ও বেচারি কি করবে?" শকুন্তলার প্রতি ঋষিকুমারের উত্তর আসে, "তুমি যদি কুলকলঙ্কিনী হও, তাহলে তোমাকে দিয়ে পিতা কি করবেন? যদি নিজের ব্রতকে পবিত্র বলে জেনে থাকো, তাহলে পতিকুলে দাসী বৃত্তিও তোমার ভালো। তুমি থাকো, আমরা যাচ্ছি।" কালিদাসের এই শকুন্তলা কখনো তর্কের পথে হাঁটেন না। সবকিছু ভবিতব্য বলে মেনে নেন। তাঁর একমাত্র অবলম্বন স্ত্রীর পবিত্রতা। নাট্যকাহিনীর শুরুতে আশ্রমজীবনে তিনি নিজের ইচ্ছায় পতি নির্বাচন করতে পারেন, কিন্তু কাহিনীর প্রান্তভাগে, কালিদাস তাঁকে রাজার পত্নী রূপে স্ত্রী ধর্মের গণ্ডিতে নিয়ে আসেন। পতি তাঁকে অস্বীকার করলেও স্ত্রী রূপে শকুন্তলা তা করতে পারেন না। এখানে তিনি অসহায়া। কালিদাস তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন নাটকের শেষ অঙ্কে এসে। রাজপুত্রের জন্ম দিয়ে তিনি ঋষি মারিচের আশ্রমে অপেক্ষা করেছেন রাজা দুষ্যন্তের জন্য। লক্ষণীয় যে মহাকাব্যের থেকে কালিদাস রাজার নামটি সামান্য পরিবর্তন করেছেন। ইন্দ্রের অসুর নিধনের কাজ শেষ করে রাজা পৌঁছেছেন হেমকুট পর্বতের সেই অপরূপ আশ্রমে। কালিদাসের বর্ণনায় বিদ্যুৎ রেখায় চিত্রিত আকাশপথ, বর্ষার জলকণা, হিমালয় প্রকৃতি, হেমকুট পর্বত সব কিছু সুন্দর হয়ে রয়েছে এক চরম মিলনের অপেক্ষায়। শিশু সর্বদমনকে খেলতে দেখেই পিতা দুষ্যন্তের মধ্যে যে অপূর্ব বাৎসল্য রস উৎসারিত হয়, তাকে রূপ দিতে পারেন এই নাট্যকার। শিশুপুত্রের সাথে পিতার এমন সুমধুর মিলনের দৃশ্য কি আর লেখা হয়েছে? এই চরম দৃশ্যে এসে শকুন্তলাকে পাই আরেক রূপে। কালিদাসের ভাষায় তিনি পূর্ণ তাপসী হলেও তার অর্থ তিনি গৃহধর্ম বর্জিতা নন। চরম সাধনার মধ্যে দিয়ে তিনি বাঞ্ছিতকে কামনা করেছেন। তাঁর দর্শন লাভ করে রাজা তাঁর পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চান, নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। কিন্তু শকুন্তলা অভিমানের চূড়ায় উঠে থাকেন না। তপোবন শিক্ষার সৌজন্যের সাথে গ্রহণ করেন পতিকে। কালিদাসের নাট্যরূপ সম্পূর্ণ হয় শকুন্তলার পার্থিব জীবনের চরিতার্থতায়। আশ্রম স্বর্গের আসন থেকে আবার মর্ত্যের মাটিতে নেমে আসেন তিনি।
ছবি ৩: শকুন্তলা, নন্দলাল বসু |
শকুন্তলার কাহিনী প্রাচীন ভারতীয় সমাজে বিশেষভাবে চর্চিত ছিল। তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন পুরাণে তার উল্লেখে। মাৎস্য পুরাণ এবং পদ্ম পুরাণে এই আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। ভাগবত পুরাণে বাসুদেবের সাথে শকুন্তলাপুত্র ভরতের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। ১৭১৬ সালে মুঘল সম্রাট ফারুক সিয়ার শকুন্তলা নাটকের ব্রজবুলি ভাষায় অনুবাদের কাজ করান। ১৮০১ সালে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের উর্দু শিক্ষক মির্জা কাসিম আলী ব্রজবুলি অনুবাদ থেকে নাটকটির উর্দু অনুবাদ করেন। স্বর্গের অপ্সরী মেনকা এই অনুবাদে বেহস্তের পরী হয়ে ওঠেন। শকুন্তলা তাপসীর বেশ ছেড়ে হন অবগুণ্ঠনবতি নারী। ঋষি কন্বের আশ্রম এই অনুবাদে হয় স্বর্গের ফোয়ারা খচিত সুদৃশ্য বাগান, ঠিক যেমনটি থাকে পার্সিয়ান সাহিত্যে। সংস্কৃত এবং ল্যাটিনের সাদৃশ্য দেখে স্যার উইলিয়াম জোনস নাটকটির প্রথম অনুবাদ করেন ল্যাটিন ভাষায়, পরবর্তীকালে ১৭৮৯ সালে তাঁর রচিত ইংরেজি অনুবাদটি প্রকাশিত হয়। সংস্কৃত সাহিত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয় ইউরোপের কাছে। যদিও মূল নাটকের মুক্ত যৌনতার অংশগুলি রক্ষণশীল ইউরোপীয় সমাজের জন্য বর্জিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেশ কিছু ভারতীয় ভাষায় শকুন্তলার অনুবাদ বেরোয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সংস্কৃত শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই নাটকের বাংলা অনুবাদ করেন তৎসম ভাষায়। শকুন্তলা কাহিনীর নানান আঙ্গিক নিয়ে একখানি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন দিল্লীর জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রোমিলা থাপার। তাঁর মতে বিংশ শতকে রবীন্দ্রনাথের শকুন্তলা সম্পর্কে বিশ্লেষণ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। রবীন্দ্রনাথ কালিদাসের নাট্যকাহিনীর সাথে শেক্সপিয়ারের "টেম্পেস্ট" নাটকের তুলনামূলক আলোচনাও করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে "বিশ্ব প্রকৃতি যেমন বাহিরে প্রশান্ত সুন্দর, কিন্তু তাহার প্রচন্ড শক্তি অহরহ অভ্যন্তরে কাজ করে, অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকখানির মধ্যে আমরা তাহার প্রতিরূপ দেখিতে পাই।" ১৯০৭ সালে রচিত "প্রাচীন সাহিত্য" গ্রন্থের এই প্রবন্ধে আছে কালিদাস একদিকে তপোবন প্রকৃতির অবিরাম লীলায় শকুন্তলার দিনযাপন দেখিয়েছেন, সেই স্বর্গ থেকে তাঁর চ্যুতি এবং কঠোর নিভৃত সাধনায় তাঁর অন্তরের স্বর্গ প্রাপ্তিও বিবৃত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের বিচারে শকুন্তলার প্রাপ্ত প্রথম তপোবন স্বর্গটি সুন্দর হলেও অরক্ষিত। সেখানে অরণ্যবাসী মৃগের মত অরণ্য বালিকা বহুগামী রাজার প্রণয়শরে বিদ্ধ হয়। কিন্তু দুঃখের দ্বারা, সাধনার দ্বারা যে স্বর্গে শকুন্তলার স্থান হয় শেষভাগে, তা শাশ্বত। সেখানে শকুন্তলা পূর্ণ।
বিংশ শতকের জাতীয়তাবাদী চিন্তার আলোকে নানান ভাবে "শকুন্তলা" নাটকের আলোচনা হয়েছে। এই শতকের প্রথম কয়েক দশক থেকেই শুরু হয় ভারতে নারীমুক্তির প্রস্তুতি। পুরুষের সাথে ঘরের বাইরে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে থাকে মেয়েরা। কিন্তু সমালোচকদের "শকুন্তলা" আলোচনায় প্রকাশিত হয় হিন্দুনারীর আদর্শ গৃহিণী রূপটি। শকুন্তলা বয়স্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীলা, এবং মাতৃত্বেই তার গৌরব এমনটিই আলোচিত হতে থাকে। বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয়ে এই নাটকের পূর্বোক্ত ভাবটির অভিনয় হতে থাকে। ১৯৪০ সালে তামিল ভাষায় এবং ১৯৪৩ সালে শকুন্তলা নাটকের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এই দুই চলচ্চিত্রেই মহাকাব্য এবং নাটক কাহিনীর মিশ্রণ ঘটেছে। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত একবিংশ শতকের নাট্যদল এবং নৃত্যনির্দেশকরা এই কাহিনীর নানান অভিনয় করে এসেছেন। ২০০৫ সালে বর্তমান প্রবন্ধ লেখকের সুযোগ হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা অভিনীত “শকুন্তলা” নাটকের। যুগ থেকে যুগান্তরের পথে এই নারীর যাত্রা অব্যাহত। ভবিষ্যতের পথে হয়তো কোনো শিল্পী সাহিত্যিকের হাতে তাঁর আরও কোনো নবরূপের উন্মোচন হবে।
গ্রন্থ সহায়তা
১. সংস্কৃত সাহিত্যসম্ভার - গৌরীনাথ শাস্ত্রী, নবপত্র প্রকাশন, তৃতীয় মুদ্রণ ১৯৮৯
২. Sakuntala: Texts, Readings, Histories - Romila Thapar, Columbia University Press, 2011
৩. প্রাচীন সাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, ১৯১৩
Picture source: Internet (low res version -- not for commercial use)
Comments
Post a Comment